ভি ফর ভিক্টোরি: ভরসার প্রতিরূপ
মানবধর্মই প্রকৃত ধর্ম। রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা কিনেছিল বাঙালি। রক্তের মূল্য আমরা বুঝি। কয়েকজন তরুণও বুঝেছিল। কোন চায়ের দোকান অথবা ক্লাসের শেষ বেঞ্চের আড্ডায় আত্মকেন্দ্রিক আলোচনাই প্রাধান্য পায়। তবে, স্বপ্নবাজেদের আড্ডায় উঠে এসেছিল মানবতা, অসহায়ের পাশে দাঁড়ানোর ভাবনা। ক্যালেন্ডারের পাতায় ১৪ই এপ্রিল ২০১৭। মূমুর্ষ এক রোগীর রক্তের প্রয়োজন।
বন্ধুর অনুরোধে ভীত সন্ত্রস্ত আরেক বন্ধু রক্ত দিতে গেল জীবনে প্রথমবার। ফেসবুকের জমানায় এমন কাজ ফেসবুকে তুলে না ধরলে চলে! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তুলে ধরল তা সে। তা দেখে রক্তদানে আগ্রহ প্রকাশ করল কয়েকজন বন্ধু।নিতান্তই শখের বশে, একমাসে প্রায় পনেরো জনকে রক্তদান করল ওরা। সেখান থেকেই শুরু পথচলা।
২৯শে মে ২০১৭, জন্ম নেয় রক্তদাতা এক সংগঠন ‘ভিক্টোরি অব হিউম্যানিটি’। ১৪ এপ্রিলের সেই রক্তদাতার নাম ফয়সাল হোসেন বাপ্পী, সদ্য আত্মপ্রকাশ করা সংগঠনের সভাপতিও তিনিই। সঙ্গে বন্ধু অনিক, মুজাহিদ ও আরো ক’জন মিলে কুমিল্লার দক্ষিণের মফস্বল শহর লাকসামে সূচনা করে নব্য উপন্যাসের।
শুরুটা রক্তদানের মাধ্যমে হলেও সময়ের বিবর্তনে পথশিশুদের জন্য শিক্ষা, অসহায় দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানো, বৃক্ষরোপন, পরিবেশ সচেতনতা, অভিনব সেলুন লাইব্রেরি গঠন, শহর পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচী, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদানসহ নানান সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম সফলতার সাথে সম্পন্ন করে আসছে। ২০১৭ সালে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে প্রায় ৪০০ বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে ত্রাণ নিয়ে দাঁড়ানো সংগঠনটি এবারো মানবতার দুয়ার খুলে দিয়েছে যমুনারতীরে বন্যায় সর্বহারা মানুষের জন্য।

সভাপতি বাপ্পীর দেখানো পথে হেঁটে মানবতার কল্যাণসাধনের ঝোঁকে ওরা করেছে অসংখ্য কাজ –
- দুই বছরে করেছে ৩১০০ ব্যাগেরও বেশি রক্তদান!
- চলমান প্রক্রিয়ায় ৩৫টি ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে বিনামূল্যে নির্ণয় করেছে ২২,০০০ মানুষের রক্তের গ্রুপ!
- চলতি বছর জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে লাকসাম উপজেলার শতাধিক স্কুল, মাদ্রাসা এবং কলেজে একযোগে মাদকের বিরুদ্ধে গণস্বাক্ষর গ্রহণ আয়োজন!
- গেল নভেম্বরে ৪২টা মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসা মিলিয়ে আয়োজন করে মেধাবী বিনোদনের উৎস ‘বিতর্ক উৎসব’।
- ‘প্রোজেক্ট নিজভূমে নিজরূপে’ নামক প্রকল্পের আওতায় গৃহহীন দুইজন বৃদ্ধ আর কয়েকজন হারিয়ে যাওয়া শিশুকে ফিরিয়ে দিয়েছে মায়ের কোলে।
সবাই স্বপ্নের পেছনে ছুটতে পারে না। একসময় ক্লান্তি ভর করে। সাহসে মরচে ধরে। ভিক্টোরি অব হিউম্যানিটির রক্তযোদ্ধা আর স্বেচ্ছাসেবীদের ওসবের ভয় নেই। মাথার উপর ছায়া হয়ে আছেন পৌর মেয়র অধ্যাপক আবুল খায়ের। গুণীজন গুণের কদর করতে জানেন। মেয়র মানে নগরপিতা। কথাগুলির সত্যতা তিনি প্রমাণ করে যাচ্ছেন অনুপ্রেরণা, উৎসাহ, পরামর্শে। প্রতিটি সদস্যকে গেঁথেছেন এক সুতোয় নিজ সন্তানের মত।
তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে সময়ের ব্যবধানে ইতিমধ্যেই সরকারি নিবন্ধনভুক্ত সংগঠনের স্বীকৃতি পেয়ে গেছে। গত ২৬ জুলাই ২০১৯ তারিখে এক জমকালো অায়োজনের মধ্য দিয়ে সংগঠনের সভাপতি ফয়সাল হোসেন বাপ্পীর হাতে সনদ তুলে দেন কুমিল্লা-৯ এর সাংসদ; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী জনাব তাজুল ইসলাম। লক্ষ্য এবার বহুদূর।

কথায় কাজে মিল রেখে সংগঠনের সদস্যরা মনে করিয়ে দিল কুসুম কুমারী দাশের সেই আদর্শ ছেলে কবিতাটি-
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে
তারুণ্যের ঝান্ডা উড়ানো ‘ভিক্টোরি অব হিউম্যানিটি অর্গানাইজেশন’ যেন লাকসাম উপজেলার মানুষের কাছে আক্ষরিক অর্থেই হয়ে উঠেছে আদর্শ সংগঠন।
