ভাগ্যিস একজন তারিক আনাম খান আছেন!
একসময় অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। ছিলেন ভারতের ন্যাশন্যাল স্কুল অব ড্রামার সেরা ছাত্র—থিয়েটার মিশে আছে অস্থিমজ্জায়। ভারতের অনুপম খেরের সাথে ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় (এনএসডি) একই সাথে ক্লাস করেছেন তিনি।
হুমায়ূন আহমেদের প্রথম দিককার কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছিলেন তারিক আনাম। তারপর কোথাও কেউ নেই ধারাবাহিককে কেন্দ্র করে হুমায়ূনের সঙ্গে সৃষ্টি হয় অভিমান এবং দূরত্ব।
এই হুমায়ুন আহেমদের শেষ কাজ ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’র সেই জমিদার চরিত্রের জন্য যখন অভিনেতা খোঁজা হচ্ছে, তখন সহকারী পরিচালক জুয়েল রানা বললেন, ‘স্যার, ঘেটুপুত্র কমলার জমিদারের চরিত্রে তারিক আনামকে নিলে কেমন হয়?’
হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘আমার ছবিতে উনি অভিনয় করবেন না। তা ছাড়া আমার মনে হয়, অভিনয়টা উনি ভালো জানেন না।’
হুমায়ূন আহমেদের বলা এই কথাটা যখন তিনি জানতে পেরেছিলেন, কেমন লেগেছিল তার, জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘মনে হয়েছিল, ঠিকই আছে—আমার অভিনয় একজনের ভালো না-ই লাগতে পারে। অভিনেতা হিসেবে আমার দায়িত্ব হলো, আমি যে ভালো অভিনেতা, সেটা প্রমাণ করা। ঘেটুপুত্র কমলার শুটিংয়ের সময় মজা করতে করতে তিনি বারবারই বলতেন, ‘আপনি এ ছবিতে অভিনয় করতে আসলেন ক্যান? ছবি মুক্তির পর সবাই তো আপনাকে ছি ছি করবে। কেউ তো আপনার পাশে বসবেও না, হা হা হা…।’

আমাদের দেশের বেশিরভাগ গুণী অভিনেতার প্রতিভাকে পুরোপুরি ব্যবহার না করার আক্ষেপ আমাদের সারাজীবনই থাকে, তারিক আনাম খানও এর মাঝে ব্যতিক্রম নন। এরপরেও আশার ব্যাপার হচ্ছে, বেশ কয়েক বছর ধরে পরিচালকেরা তাকে নিয়ে ভাবছেন আর ভিন্ন ধরনের সব ক্যারেক্টার দিচ্ছেন তাঁকে।

‘দেশা দ্য লিডার’ সিনেমা দিয়ে বলতে গেলে একেবারেই ভিন্ন এক তারিক আনাম খানকে আবিষ্কার করা আমাদের। পরিচালকদের ভাবনার জায়গায় তারিক আনাম খান যে ভালোভাবেই দিনদিন জায়গা করে নিচ্ছেন তার প্রমাণ হচ্ছে এই ঈদে একই সাথে দুটি সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে তার। অর্থাৎ পর্দায় দেখা যাবে তারিক আনাম খান বনাম তারিক আনাম খানকে!

একটিতে তিনিই প্রধান চরিত্রে, আরেকটিতে তিনি শাকিব খানের সাথে। প্রথম সিনেমার নাম আবার ‘বসন্ত’, দ্বিতীয় সিনেমার নাম ‘নোলক’। এর মাঝে ‘আবার বসন্ত’ নিয়ে আমি বেশি আগ্রহী, কারণ এই ধরনের অসম বয়সের প্রেমের গল্পের সিনেমা আমাদের দেশে হয়না।
আগামী ১২ তারিখ দুপুর দুইটায় আবার বসন্ত নিয়ে একটি সারপ্রাইজ আসছে সিনেমার টিমের পক্ষ থেকে। সেই সারপ্রাইজের অপেক্ষায় রইলাম আপাতত।
ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সাথে অভিনয়ের ওয়ার্কশপ করার সুযোগ হয়েছে। একটা মানুষ অভিনয় সম্পর্কে যে কী পরিমাণ জানেন আর কী পরিমাণ পড়াশোনা তিনি এখনও করেন – সেটা সেদিন টের পেয়েছি।
খুব চমৎকার একটা কথা বলেছিলেন, ‘নিজের মনটাকে সবসময় ঠিক রাখবে সাকিব, যা করবে মন থেকে করবে, মন দিয়ে করবে। মনে রাখবে, অ্যান অ্যাকটর উইটাউদ মাইন্ড ইজ নট আ গুড অ্যাকটর।’
একটা কুইজ দিয়ে লেখা শেষ করি। ‘অ্যাভেঞ্জার্স: এজ অব আলট্রন’-এর বাংলাদেশ অংশের প্রোডাকশন সুপারভাইজার কে জানেন? জি হ্যাঁ, মানুষটি হচ্ছেন আমাদের তারিক আনাম খান!