আমার কলিজায় কামড় দেওয়া শাকিব খান!
শাকিব খান বাণিজ্যিক ঘরানার বাইরো কোনো ছবির কাজ হাতে নিলে আমার কলিজা কামড় দিয়ে ওঠে। এই বুঝি আরেকজন পরিচালকের লাশ চিতায় উঠলো!
‘দেবদাস’ হতে পারতো শাকিবের জীবনের শ্রেষ্ঠ ছবি। চাষী নজরুল ইসলাম তার ক্ল্যাসিক ছবি ‘দেবদাস’-এর রিমেকে শাকিবকে তাঁর নায়ক-জীবনের সেরা চরিত্রটি করার সুযোগ দেন। এই অমূল্য সুযোগ শাকিব হাসতে-হাসতে হেলায় হারান। কোথায় বুলবুল আহমেদ, উত্তম কুমার, দীলিপ কুমারের দেবদাস, আর কোথায় শাকিব খানের দেবদাস!
শাহরুখ খানের জুতায় পা গলাতে গিয়ে আছাড় খেয়ে দেবদাসের সেকি বিশ্রী হাল। উপমহাদেশের সবচেয়ে বাজে দেবদাসের মুকুট এখন কিং খানের মাথায়! চাষীর স্বপ্নের ছবি দেবদাসের শিডিউল ফাঁসিয়ে, ইমপ্রেসের মতো প্রযোজককে নাকানি-চুবানি খাইয়ে ছবির এমন দফা-রফা করেন শাকিব, যুগের শ্রেষ্ঠ ছবি দূরে থাক, বছরের একটা ভাল ফ্লপ ছবিরও সম্মান জোটাতে পারেনি দেবদাস।
সাহিত্যভিত্তিক ছবি করতে গিয়ে শাকিব লেজে-গোবরে করে ফেললেন। এবার মুক্তিযুদ্ধের ছবি ‘এই তো প্রেম’। আমজাদ হোসেনের ছেলে সোহেল আরমানের প্রথম ছবি। মুক্তিযুুদ্ধের উপরে শাকিবের প্রথম ছবি। ছবি রিলিজের আগেই হাবিব ওয়াহিদের গান ম্যাসিভ হিট হয়ে গেলো। সেই ছবির শিডিউল নিয়ে সোহেল আরমানকে এমন গভীর জলে ফেললেন শাকিব, সোহেল সেই যে কানে ধরলেন আর কোনদিন সিনেমার নাম মুখে নিলেন না।
ধুঁকতে ধুঁকতে ‘এই তো প্রেম’ কয়েক বছর পর একসময় রিলিজ হলো বটে। না মুক্তিযুদ্ধের ছবি হিসেবে, না মুক্তিযাদ্ধা চরিত্রে শাকিবের পারফর্মেন্স, কোনোটাই ইতিহাসে জায়গা পেলো না।
শাকিবের শেষ নীরিক্ষামূলক ছবি ‘সত্তা’। ব্যবসার বিচারে ‘দেবদাস’ আর ‘এই তো প্রেম’-এর সঙ্গে একই পাল্লায় উঠে গেলো ‘সত্তা’। অথচ পাওলি দামের মতো পোড়খাওয়া অভিনেত্রীকে পাশে নিয়ে ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ছবিটি চাইলেই বের করে নিয়ে আসতে পারতেন শাকিব।
আজ শাকিব গল্প শুনে প্রযোজনা করতে রাজি হয়ে যান, সেদিন কিন্তু তিনি ‘সত্তা’র শিডিউলই বের করতে পারেননি। ‘সত্তা’র জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কার পেয়ে বিগলিত হাসি হাসছেন, ১৫-১৬ সালের পত্রিকার পাতা দেখুন, তাঁর শিডিউলের অভাবে ‘সত্তা’র কাজ সম্পূর্ণ করা যায়নি।
শাকিব নতুন একটি ছবির কাজ শুরু করবেন এমন খবর দেখে খান সাহেবের পুরনো গুণপনার কথা মনে পড়ে গেল। তাঁকে দিয়ে ভিন্নধর্মী ছবি করানো অসম্ভব। নাচানাচি, গানা-পিনা, হাতাহাতির ছবি করানো সম্ভব, সাফল্যও নাগালের ভেতর, তবে ভিন্নধর্মী ছবি অসম্ভব। আধাখেচড়া কাজ করেও ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ঠিক জুটিয়ে নিতে পারবেন শাকিব; কিন্তু ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘নয়নের আলো’ বাদ দিলাম, নিদেনপক্ষে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ করাও তাঁর পক্ষে অসম্ভব।
প্রশ্ন উঠতে পারে, শাকিব ‘সত্তা’র মতো ছবিগুলো তবে কেন করেন! আমিও পাল্টা প্রশ্ন তুলতে চাই, ‘পাঙ্কু জামাই’য়ের মতো ছবিগুলো শাকিব খান কেন করেন! জাতীয় পুরস্কারের জন্য শাকিব খান ‘এই তো প্রেম’-এর মতো ছবি করেন না। শাকিব খানের জাতীয় পুরস্কার সুপারহিট ছবি থেকেই আসে। তাঁর জন্য অফট্র্যাক ছবি করা লাগে না। রদ্দিমার্কা কাকরাইলের ছবির মতো অফট্র্যাক ছবিও তিনি করেন টাকারই জন্য। যদি তা না হতো, তবে এসব ছবি অসম্পূর্ণ করে ফেলে রাখতেন না। সিরিয়াসলি সিরিয়াস ছবির কাজ করতেন।
শাকিব খান বাণিজ্যিক ছবির অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়ক। এসব ছবির জন্য যা যা যোগ্যতা লাগে, যতটুকু অভিজ্ঞতা লাগে, যতখানি কৌশল জানা লাগে, তার সবকিছু তার আয়ত্তে। দর্শকপ্রিয় ধারার ছবির জন্য তার মতো নায়ক যুগ পেরিয়ে একজন আসে। কিন্তু তাঁর পক্ষে সৌমিত্র চ্যাটার্জি হওয়া সম্ভব নয়। সম্ভব নয় আমির খান হওয়া। আর টম হ্যাংকসের ছবি হয়তো তিনি কখনো দেখেনইনি!