হৃদয় ছোয়া স্বপ্নের জাল
আমাদের ঠিক আগের জেনারেশন যখন ছিল টেলিফোনের যুগ, চিঠির যুগ ঠিক সে সময়কে আলোকপাত করে গিয়াস উদ্দীন সেলিম একটা রোমান্টিক গল্প বলেছেন। যাতে ভালবাসা, বিষাদ আর সাম্প্রদায়িকতাকে ফুটানো হয়েছে তুলির আচড়ে।
- মুভি বিশ্লেষণ
সিনেমাটিতে নজর কাড়ার অনেকগুলো উপাদান ছিল। চিত্রনাট্য, অভিনয়, দৃশ্যায়ন সবই ভাল ছিল। পুরো মুভি দর্শক ক্ষণে ক্ষণে হাসবে। সেই হাসির জন্য কোন পাঞ্চ লাইন লাগেনি, আমাদের আশাপাশে দেখা মানুষগুলোর কথাকেই পর্দায় দেখে হাসি এসেছে। এটাই চিত্রনাট্যের সফলতা। গিয়াস উদ্দীন সেলিম রসবোধের সাথে গল্প বলেছেন। এটাই সিনেমাটিতে সবচেয়ে বেশি মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে।
সিনেমাটোগ্রাফি অবশ্য ‘হালদা’ যে লেভেলটায় নিয়ে গিয়েছিল সেটা না ছুঁয়েও পাশ মার্ক পেয়েছে ভালভাবেই।
অভিনয়ে পরীমনি যেন এক ফালি পূর্ণিমার চাঁদ। আহ! কি চাউনি, অদ্ভুত আকর্ষণীয় হাসি আর মনমাতানো বাচ্চামো। তাকে দেখতে টিনেজার না লাগলেও নিজেকে সেভাবে ফুটাতে কমতি রাখেননি। আশার চেয়ে বেশি দিয়েছেন।
নবাগত ইয়াশ রোহান বড়জোর নাটকের অভিনেতা হতে পারতেন।তার সম্পর্কে শুধু বলতে পারি – ‘ছেলেটা কি কিউট!’ নতুন বলে মেকি এক্সপ্রেশন বা ডায়লগ ডেলিভারির খুঁত ধরার ইচ্ছে হয়নি।
ফজলুর রহমান বাবু একজন হলিউড লেভেলের অভিনেতা, ভদ্রলোক এই অঞ্চলে না জন্মালে কত নাম করতেন সেগুলো ভাবলেই সুখ-দু:খ একসাথে ঘিরে ধরে। সুস্থ্য, মাতাল, অসুস্থ প্রতিটা জায়গায় এক্সপ্রেশন দিয়ে মাত করেছেন এবং হাসিয়েছেন সিরিয়াস সব কথা দিয়ে।
ইরেশ জাকের ছোট চরিত্রকে জাস্ট অভিনয় গুণে এতটা গুরুত্ববহ আর মজাদার করেছেন। চামচা ক্যারেক্টার যে এতটা মজবুত করা যায়, সেটা তাঁকে না দেখলে বুঝা যেতোনা। টপক্লাস একজন অভিনেতা।
এছাড়া কলকাতার শিল্পীরাও ভাল করেছেন, যেমনটা বাবা চরিত্রে নরেশ ভূঁইয়া এবং ক্যামিওতে মিশা সওদাগর দেখিয়েছেন। পার্সোনালি মিশাকে আন্ডার ইউজ করায় ক্ষুণ্ণ হয়েছি।
মুভির একমাত্র ব্যর্থতা চরিত্রগুলোর দর্শকের সাথে প্রপার কানেকশন এবং কয়েকটা ক্যারেক্টারের বিল্ডাপে। যেমন উকিল ক্যারেক্টার পজেটিভ থেকে নেগেটিভ দেখিয়েও শেষে ধোঁয়াশা রাখা হয়েছে। বাবুর ক্যারেক্টারটা স্ট্রং থেকে একেবারেই দুর্বল করে দর্শকদের সাথে কানেকশন নরবড়ে করেছে। আর ঠিক সে কারণেই দর্শকদের যতটা ইমোশনাল করার মতো স্ক্রিপ্ট ছিল, তার ছিটেফোঁটা ইমোশনাল দর্শক হয়নি। বরং ‘দুর্দান্ত’ এর বদলে ‘ভাল’ মুভির অনুভূতি নিয়ে বের হয়েছেন।
মিউজিক মন ছুঁয়েছে। এমন করে বলছি মুভিটারই ট্রেডমার্ক একটা গান। মন ভাল করা কিছু মুহুর্তের একটা ছিল।
গিয়াস উদ্দিন সেলিম মানেই প্রত্যাশার কোণায় উকি দিচ্ছিলো আরো একটা মনপুরার, তবে স্বপ্নজাল দিয়ে সেটা ছুঁতে না পারলেও দারুণ একটা গল্প বলেছেন সুন্দর স্টাইলে। হলে বসে সুন্দর ২ ঘন্টা কাটানোর মতো মুভি, ডায়নিং টেবিলের মুভি নয়। তাই মিস করতে না চাইলে কাছের কোন হলে দেখে নিন।
- অভিনয়ে
ইয়াশ রোহান, পরীমনি, ফজলুর রহমান বাবু, ইরেশ জাকের, নরেশ ভুঁইয়া, মিশা সওদাগর প্রমুখ।
- পরিচালক
গিয়াস উদ্দীন সেলিম
- পার্সোনাল রেটিং:
৩.৭৫/৫ (মাস্টওয়াচ)