পেশায় গোলরক্ষক, নেশায় সিনেমা পরিচালক!
আইসল্যান্ডের আবহাওয়া আক্ষরিক অর্থেই বরফ শীতল। দেশটা ফুটবল খেলার জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়। ওদের ফুটবল খেলার জন্য কোনো মাঠ নেই। তবে, বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে ফুটবলের জন্য ১১ টি ঘর বানিয়েছে তাঁরা।
আইসল্যান্ড দলটাও যথেষ্ট ভুতুড়ে। চলতি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ১-১ গোলে রুখে দেওয়া দলটির কোচ পেশায় একজন ডেন্টিন্স। দলের খেলোয়াড়দের তালিকায় বোর্ড গেম পাবলিশার কিংব ওয়াইন রফতানিকারীও আছে।
তবে, এদের সবার থেকে আলাদা গোলরক্ষক হ্যানেস হ্যাল্ডরসন। তাঁর আগ্রহ সিনেমায়। হ্যা, তিনি একজন সিনেমা পরিচালক। মেসির পেনাল্টি ঠেঁকিয়ে দেওয়া এই হ্যাল্ডরসন গোলরক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার শেষ করার পর পাকাপোক্ত ভাবে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নাম লেখাবেন। বিশেষ করে, ৩৪ বছর বয়সী এই ফুটবলারের হরর সিনেমা বানানোর দিকে চোখ তাঁর।
বিশ্বকাপের মঞ্চে গিয়েও সিনেমার প্রতি তাঁর ভালবাসার বহিপ্রকাশ হল। তিনি রাশিয়ার ব্ল্যাক সি কোস্টে দলের বেস ক্যাম্পে বসে বলেন, ‘ফুটবল দলের সদস্য হিসেবে সিনেমা বানানোর কাজটা নি:সন্দেহে সবার চোখে ভুতুড়ে একটা কাজ। আসলে ফুটবলার ও ফিল্ম মেকিং দু’টো বিষয়ই এক সাথে যায় না।’
কিন্তু মেসিকে আটকে দেওয়ার রহস্যটা কি? ডেনমার্কের ঘরোয়া লিগে খেলা হ্যাল্ডরসন বলেন, ‘আমি মেসির অনেকগুলো পেনাল্টি কিকের ভিডিও দেখেছি। শেষ কয়েকটা পেনাল্টিতে আমি কোন দিকে ঝাঁপিয়েছি সেটাও দেখেছি। আমি তাই তাদের মানসিকতা পড়ার চেষ্টা করেছি। তারা আমাকে নিয়ে কীভাবে ভাবতে পারে, সেটা বোঝার চেষ্টা করেছি।’
মনের ভেতর গর্বটাও কম না তাঁর। বললেন, ‘প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে এসে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের পেনাল্টির সামনে পড়া, ব্যাপারটা মোটেও সহজ ছিল না। আমার জন্য অনেক বড় মুহূর্ত ছিল এটি। অনেকটা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ব্যাপার। বিশেষ করে যখন এটি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ এক পয়েন্ট এনে দিয়েছে।’
প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ খেলতে এসে আর্জেন্টিনার মত দলকে রুখে দেওয়াই আইসল্যান্ডের জন্য বড় ব্যাপার। সময়টা তাঁদের জন্য উপভোগেরই। যদিও, হ্যাল্ডরসনের একটু আক্ষেপও আছে। এবার বিশ্বকাপে খেলতে এসেছেন বলেই টেলিভিশন সেটের সামনে বসে খেলার দেখার সুযোগই পাচ্ছেন না।
তবে দুটো সময়ের পার্থক্যটা ভালই উপভোগ করছেন, ‘আমাদের খেলা বাদে আশেপাশের দুনিয়ায় কি হচ্ছে, তার কোনো খবরই রাখছি না। আমরা এখন শুধু আমাদের পরিকল্পনামত এগোচ্ছি। বিশ্বকাপ আলাদা ব্যাপার। টেলিভিশন বসে বিশ্বকাপ দেখা, আর সত্যিকারের বিশ্বকাপ খেলার মধ্যে আকাশপাতাল পার্থক্য।’
– টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে