হাওয়া মে উড়তা যায়ে…
হাওয়া মে উড়তা যায়ে গানের সাথে মোটরসাইকেলে বসে আঙ্গুলে চেইন ঘুরানো ‘বাকের ভাই’, যার মৃত্যুতে রাস্তায় রাস্তায় মিছিল হয়, মিলাদ হয়। নাটকের চরিত্র হয়েও দর্শকদের হৃদয়ে বাস্তবের চরিত্র হয়ে মিশে গেলেন।
‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের সেই প্রিয় বাকের ভাই হয়ে যিনি দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন, তিনিই আবার ‘অয়োময়’ এর মির্জা সাহেব হয়ে নিজেকে পরিক্ষীত করেছেন। ‘এইসব দিনরাত্রি’র ‘শফিক’ হউক কিংবা নক্ষত্রের রাতের ‘হাসান সাহেব’, সব চরিত্রেই তিনি সমান পারদর্শী। অভিনয়ের বাইরেও রাজনৈতিক অঙ্গনে রয়েছে সফল পদচারনা। হুমায়ূন আহমেদের নাটকে যিনি ছিলেন অনন্য, তিনি টেলিভিশন জগতের কিংবদন্তি অভিনেতা ও বর্তমান সংস্কৃতি মন্ত্রী ‘আসাদুজ্জামান নূর’।
তিনি ছিলেন থিয়েটারের লোক। মঞ্চ থেকেই তার মতো অভিনেতার উত্থান। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের হয়ে তিনি বহুকাল ধরে কাজ করে আসছেন। এই দলের জন্য বিদেশি একটি নাটকের অনুবাদ করেছিলেন নূর। জনপ্রিয় সেই প্রযোজনাটির নাম ‘দেওয়ান গাজির কিসসা’।

টিভিনাটকে প্রথম অভিনয় করেন ‘রঙের ফানুস’ নাটক দিয়ে। টেলিভিশন জগতের জনপ্রিয় ধারাবাহিক এইসব দিনরাত্রি, অয়োময়, কোথাও কেউ নেই, নক্ষত্রের রাত থেকে সবুজ ছায়া, সবুজ সাথী, আজ রবিবার, সব নাটকেই তিনি ছিলেন অনন্য। অন্যান্য নাটকের মধ্যে প্রিয় পদরেখা, নিমফুল, জোছনার ফুল, সমুদ্র বিলাস প্রাইভেট লিমিটেড অন্যতম। ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ কাজই করেছেন হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে। সর্বশেষ কাজ করেছেন নুহাশ হুমায়ূনের ‘হোটেল আলবাট্রস’ নাটকে।
প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন ‘দহন’ ছবিতে, এরপর ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘আগুনের পরশমনি’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’ ছবিতে অভিনয় করেন।
১৯৬২ সালে স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সকল আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন আসাদুজ্জামন নূর। পরবর্তীতে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আসাদুজ্জামান নূর মুক্তিযুদ্ধে ৬ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

নব্বই দশকে জাহানারা ইমামের যুদ্ধাপরাধী বিচারের আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তিনবার সাংসদ হওয়ার পর বর্তমানে সংস্কৃতি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
বর্নাঢ্য ক্যারিয়ারে এখনো একুশে পদক কিংবা জাতীয় পুরস্কার কিছুই পাননি। বিয়ে করেছেন চিকিৎসক শাহীন আখতারকে, রয়েছে দু’টি সন্তান। বেসরকারী স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল দেশ টিভির প্রধানকর্তা তিনি, উপস্থাপনা করেছিলেন ‘কে হতে চায় কোটিপতি’র আসরে। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন।
১৯৪৬ সালের ৩১ অক্টোবর জন্ম নেওয়া কিংবদন্তি অভিনেতা কাটিয়ে ফেলেছেন জীবনের ৭২ টি বসন্ত। তার জন্য রইলো শুভকামনা। এই পথ যেন না শেষ হয়!