এই ‘স্ত্রী’ সেই ‘স্ত্রী’ নয়!
‘স্ত্রী’ সিনেমার গল্পটিকে আপনি চাইলেই হাস্যরসের কাতারে ফেলতে পারেন আবার চাইলেই ভয় পাবেন এমন কাতারেও ফেলতে পারেন – এর নির্ভর করবে পুরোটাই আপনার উপর। সিনেমার ভাষায় এমন জনরাকে বলে ব্ল্যাক কমেডি।
গল্পটির প্রেক্ষাপট সেই আশির দশকের সময় যখন তেলেগুর ট্রিপুতি অন্ধ্রপ্রদেশের প্রতিটি ঘরের দরজায় লিখা থাকতো ‘ও স্ত্রী রেপু রা’ মানে ‘ওহে নারী কাল এসো’। ২০১৮ সালে এসে অমর কৌশিকের পরিচালনায় এবং রাজ নিদিমরু ও কৃষ্ণা ডি.কে লেখার মাধ্যমে বড় পর্দায় দর্শকের সামনে আসে ‘স্ত্রী’।
গল্পের শুরুতে আপনি যতোটা মজা পাবেন, আস্তে আস্তে যখন সিনেমাটি গল্পের ভিতরে প্রবেশ করবে তখন এটা আপনাকে আরো বেশি টানবে। আর সবশেষে এসে নির্মম বাস্তবতার এক বহি:প্রকাশ দেখতে পাবেন। এটাই তো ব্ল্যাক কমেডির মজা।
- অভিনয় সংক্ষেপণ:
রাজকুমার রাও এই লোকটি প্রমাণ করেছেন ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে হলে মাখন টাইপ চেহারা লাগে না, নিজের গুণ দিয়েই টিকে যায়। তাঁর অভিনীত ‘সিটি লাইট’ সিনেমাটি আমাকে তাঁর ভক্ত হতে বাধ্য করে। এই ফিল্মটি নারী নির্ভর হলেও পুরুষরাই আপনাকে বেশি আকর্ষিত করবে, যার অন্যতম উপাদান হলো রাজকুমার রাও।
শ্রদ্ধা কাপুর ‘আশিকি টু’ দেখার পরে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম এই নায়িকার আর কোনো ছবি দেখবো না! কিন্তু কাল অনিচ্ছাসত্ত্বেও ‘স্ত্রী’ ফিল্মের কারণেই তাঁর অভিনয় দেখা আর দেখে কিছুটা ধারণা পেলাম! যার মধ্যে একটি হলো তিনি বেশ সুশ্রী এবং অভিনয়ের জন্য বেশ পরিশ্রম করছেন।
পঙ্কজ ত্রিপাঠি তাঁর করা সহ-অভিনোর চরিত্রে সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে ‘রুদ্র’ চরিত্রটি। হঠাৎ হঠাৎ চুপ মেরে ডায়লগ দিয়েই আপনাকে হাসিয়ে দিবে এই চরিত্রটি। পঙ্কজ ত্রিপাঠি লোকটাই এমন। যখন কমেডি করেন, মনে হয় তাঁর চেয়ে ভাল করে এই চরিত্রটা আর কেউ করতে পারতেন না। আবার যখন গ্যাঙ নির্ভর সিনেমা করেন, মনে হয় তাঁর চেয়ে ভয়ঙ্করও বুঝি আর কেউ হতে পারেন না।
পরিচালনা নিয়ে আবারো আলাদাভাবে কিছু বলাই লাগে, এমন একটি গল্পের মাঝেও যে দারুণ কিছু কমেডি ধাঁচ দিয়ে দর্শকের মন জয় করা যায় এটা হয়তো এই সিনেমা দেখলে বেশ ধারণা পাওয়া যাবে। পরিচালক আলাদাভাবে প্রশংসা পাওয়ার দাবিদার এই কারণেই বলছি কারণ উনি শেষটা যেভাবে শেষ করেছেন আমি হলফ করে বলতে পারি এই ফিল্মের পরের সিকুয়েলের জন্য অনেকেই অপেক্ষা করবে।
- কাহিনী সংক্ষেপ:
চান্দেরী এলাকার সবচেয়ে জনপ্রিয় দর্জি হিসেবেই নিজেকে দাবী করেন গল্পের ভিকি চরিত্রটি। বেশ দারুণ সব পোশাক বানানো এবং নিজেই সে পোশাক পরে থাকার জন্য বেশ সুনাম তাঁর। তাঁর বাবাও তাকে নিয়ে বেশ গর্ব করে, বাবার ধারণা ছেলেই পারবে তাঁদের বংশের ধারা ধরে রাখতে।
তো এই হাসি খুশি ছেলের জীবনে উল্কাপিণ্ডের মতো আগমন ঘটে এক রহস্যময়ী নারীর যার নেই কোনো নাম নেই কোনো ঠিকানা! ভিকি শুধু এতোটুকুই জানে প্রতি পূজায় সে আসে এ এলাকায়! অন্য দিকে ভিকির গ্রামের সবাই চিন্তিত ‘স্ত্রী’ নামক এক আধ্যাত্মিক শক্তি নিয়ে!
প্রতিটি দেয়ালে দেয়ালে লেখা ‘ও স্ত্রী কাল আসব’ কি এই রহস্য! কি এই কারণ! তা খুঁজতে খুঁজতেই উঠে আসে এক চরম সত্য! যার পূর্ণ ধারণে মিলবে স্ত্রী ফিল্মের মাধ্যমেই। যদি দেখে না থাকেন দেখে নিতে পারেন দারুণ সময় পার করবেন আশা করছি।
সবশেষে আমার মনে হচ্ছে আরো কিছু সময় যদি এর রান টাইম হতো তাহলে আরো ভালো হতো, তবে একবারে মনে যে ধরে নাই তাও না। ২০১৮ সালে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন এই ফিল্মের কলাকুশলীরা। উঠিয়ে নিয়েছেন তিন ডাবল লভ্যাংশেরও বেশি।
এই সময়ের অন্যতম প্রতিভাবান অভিনেতা রাজকুমার রাওয়ের ক্যারিয়ারেও সিনেমাটা একটা মাইলফলক হয়ে থাকছে। কারণ, এই সিনেমা দিয়েই তো প্রথমবারের মত শতকোটির ক্লাবে নাম লেখালেন তিনি।
এক নজরে
- পরিচালক: অমর কৌশিক
- রচয়িতা: রাজ নিদিমরু ও কৃষ্ণা ডি.কে
- অভিনয়ে: রাজকুমার রাও,শ্রদ্ধা কাপুর,পঙ্কজ ত্রিপাঠি ও আরো অনেকে।
- জনরা: ব্ল্যাক কমেডি
- ব্যাপ্তিকাল ১২৮ মিনিট
- মুক্তির সময়: ৩১ আগস্ট, ২০১৮ইং
- আইএমডিবি রেটিং: ৮/১০
- ব্যক্তিগত রেটিং: ৮.৫/১০
- বাজেট: ২৪ কোটি রুপি
- বক্স অফিস: ১৮০.৭৬ কোটি রুপি
- প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান: ম্যাডডক ফিল্মস এবং ডি টু আর ফিল্মস।