প্লট হিসেবে সিরাজউদ্দৌলা কতটা জনপ্রিয়?
নবাব সিরাজউদ্দৌলার জীবন কাহিনী নিয়ে নাটক কিংবা থিয়েটার কম হয়নি। ১৯০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত নাটকে আর থিয়েটারে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ মঞ্চায়ন চলে আসছে। প্রাধান্য পাচ্ছে সিনেমাতেও।
এই কাহিনী যেন সর্বশ্রেণীর মানুষকে এখন পর্যন্ত আকৃষ্ট করে যাচ্ছে। প্রখ্যাত নট দানী বাবু থেকে শুরু করে পরবর্তীতে বহু নট সিরাজউদ্দৌলা নাম ভূমিকায় অভিনয় করে গেছেন।
নির্মলেন্দু লাহিড়ী রাতের পর রাত সিরাজউদ্দৌলা সেজে মঞ্চ কাঁপাতেন – সেই সকল কাহিনী তো আজ কিংবদন্তি হয়ে রয়েছে।
শুধু কলকাতায় নয়, দুই বাংলার শহরে-বন্দরে কিংবা গ্রামে নাটকে কি যাত্রায় বার বার প্রাধান্য পেয়েছে ‘সিরাজউদ্দৌলা’সেই কাহিনী।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের নিকট পরাজয় বরণ করেন সিরাজউদ্দৌলা। মীর জাফর নবাবকে আশ্বাস দেন যুদ্ধ করবেন, কিন্তু তিনি সেই আশ্বাস তিনি রক্ষা করেননি। ফলে যুদ্ধে পরাজয় বরণ করে পত্নী লুৎফুন্নেসা, কন্যা উন্মত জহুরা ও বিশ্বাসী একজনকে সঙ্গে নিয়ে পাটনায় চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
দুর্ভাগ্য বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাবের। সাধারণ বেশে রাজমহল ছেড়ে যাওয়ার পথে ভগবানগোলায় দাসসা ফকিরের চক্রান্তে ধরা পড়ে যান। মীরজাফরের পুত্র মীরন-মোহাম্মদী বেগকে দিয়ে সিরাজকে হত্যা করান। এই দু’জন হত্যাকারী সিরাজকে হত্যার পর তার মৃতদেহ হস্তিপৃষ্ঠে চড়িয়ে সমস্ত শহর পরিক্রমা করেছিল।
সেই হৃদয় বিদারক কাহিনী যাত্রামঞ্চে বেশী প্রাধান্য পেলেও সিনেমায় কিন্তু ততটা পায়নি। সিরাজউদ্দৌলা সেই কাহিনী নিয়ে সর্বপ্রথম ছবি নির্মাণ হয়েছিল কলকাতায়।
সেই ছবিটি নির্মাণ করেছিলেন – বিখ্যাত পরিচালক অমর দত্ত। সেটা পঞ্চাশের দশকের কথা।
অভিনয়ে ছিলেন – সমীর মজুমদার, বাণী ব্যানার্জী, বিকাশ, কানু, নীতিশ, শিশির মিত্র, শিশির বটব্যাল, উৎপল দত্ত, প্রীতি মজুমদার, বেচু, কৃষ্ণধন, অনুভা গুপ্তা, মঞ্জু দে, পদ্মা, জয়শ্রী, মিরিয়াম ষ্টাক এবং আরও অনেকে। নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সমীর মজুমদার। সুর সংযোজনায় ছিলেন পবিত্র চট্টোপাধ্যায়।
অমর দত্ত পরিচালিত ‘সিরাজউদ্দৌলা’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫২ সালে। এরই দীর্ঘ পনেরো বছর পরে ১৯৬৭ সালে ঢাকায় ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছবিটি নির্মাণ করেন খান আতাউর রহমান। ছবিটির মুক্তির তারিখ ১৯৬৭ সালের ১২ জানুয়ারি।
ছবিটি মুক্তির পরে জনতা দলে দলে এই ছবি দেখার জন্য ছবিঘরে ভিড় করতো। আনোয়ার হোসেনকে নবাবের ভূমিকায় দেখে দলে দলে জনতা সেদিন যেনো তারই ভক্ত হয়ে উঠেছিল।
নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে আজ অবধি সেই আনোয়ার হোসেন বাঙালির প্রিয় তারকা হয়ে রইলেন। তেমনি সফল হয়েছিলেন আনোয়ারা জামাল, আলেয়ার চরিত্রে অভিনয় করে।
ঢাকায় নির্মিত নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছবিতে এছাড়া অভিনয় করেছিলেন আতিয়া চৌধুরী, তন্দ্রা ইসলাম, সুলতানা, খান আতাউর রহমান, কাজী মেহফুজ, মঞ্জুর হোসেন, আলী মনসুর, আবদুল মতিন, এম এ সামাদ, আবুয়াল, আনিস এবং আরও অনেকে।

নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছবির একটি স্মরণীয় গান ছিল এমন –
ও আমার জন্মভূমি মাগো মা
তোমারেই সবার চেয়ে বড় বলে মানি
তোমারেই সবার চেয়ে আপন জানি
ও আমার জন্মভূমি মাগো মা
তোমারই বাউল বাতাস মেঘলা আকাশ
কি যে মায়া ভরা অবিরত
তোমারই ধানের ক্ষেতে শ্যামল মাঠে কি যে মায়ের বুকের মত
তোমারই স্নেহ ভরা মায়া ভরা মাটিতে
তোমারই সবুজ প্রাণ কি যে ব্যথা লাগে মনে
তোমারই অশ্রুঝরা নয়নে
কি যে ব্যথা আনে প্রাণে
ও আমার জন্মভূমি মাগো মা!

১৯৮৯ সালে ঢাকাতেই এই ছবিটির রিমেক হয়েছিল। ছবিটিতে ছিলেন প্রবীর মিত্র, জিনাত, অঞ্জু, জাম্বু-সহ অনেকেই। আধুনিক যুগেও সিরাজউদ্দৌলাকে নিয়ে কাজ হয়েছে।
স্টার জলসায় ২০১৮ সালে ‘আমি সিরাজের বেগম’ নামে একটি সিরিয়াল সম্প্রচার করে। যদিও, তাতে ইতিহাস বিকৃতির বিস্তর অভিযোগ পাওয়া যায়।
