লাল ঝুঁটি কাকাতুয়া ও মাস্টার শঙ্কর
‘লাল ঝুঁটি কাকাতুয়া ধরেছে যে বায়না,
চাই তার লাল ফিতে চিরুনি আর আয়না।’
এই গানটা আমরা ছোটোবেলায় শুনিনি এমন একজনও হয়তো নেই। গানটা এখনো ঠিক আগের মতই চিরসবুজ। এই গান গেয়ে আমাদের মা-খালা, পিসি-ঠাকুমারা খাইয়ে দিয়েছেন, ঘুম পাড়িয়েছেন,রাগ ভাঙিয়েছেন। আজকালকার খুদে গায়ক গায়িকাদের গান করতে বললে এখনও অনেকেই ‘লাল ঝুঁটি কাকাতুয়া’ গেয়ে ওঠে।
হেমন্ত তনয়া রাণু মুখোপাধ্যায়ের লেজেন্ডারি গান। কোন ছবির? হ্যাঁ….অগ্রদূতের ‘বাদশা’।
নামভূমিকায় ছিলেন কালী ব্যানার্জ্জী ও সঙ্গে মাস্টার শংকর। সেই মাস্টার শঙ্কর এখন অধ্যাপক ড. শঙ্কর ঘোষ।
ওনার সঙ্গে আলাপ হতেই বলে গেলেন কত কত কথা।আমিও মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম ছোটবেলায় কলকাতা দূরদর্শনে ‘ছুটি ছুটি’ তে ‘বাদশা’ ছবিতে যে কিশোরকে দেখতাম সে সেইসব গল্প আমায় বলছেন।
তেষট্টির ছোটোদের সুপারহিট ছবি ‘বাদশা’-তে অভিনয় করেছিলেন কালী বন্দ্যোপাধ্যায়,সন্ধ্যারানী,বিকাশ রায়,অসিত বরণ,মাঃ শঙ্কর ও আরো অনেকে।
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরারোপে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় ছবির সবকটা গান মারকাটারি হিট হয়ে যায়।মনে পড়ে পিতাপুত্রী হেমন্ত রাণুর গান –
‘প্যায়ারিলালের খেলা দেখে যা
বান্দর বিবির শাদি হবে ছাগল বুদ্ধুর সাধ
তার পিঠে চড়ে কানে কানে করবে কতই বাত।
কুচ বল বুদ্ধু বল প্যায়ারিলালের খেলা দেখে যা।’
কালী ব্যানার্জ্জী আর শঙ্কর ঠোট মেলান। শঙ্করের কন্ঠে রাণু মুখোপাধ্যায়ের আরেকটা গান খুব সুপারহিট হয়।যে গান ঘরেঘরে বাচ্চাদের ভোলাবার গান হয়ে যায়।
‘শোন শোন শোন মজার কথা ভাই,
আমায় বাঁদর শুধায় কুত্তা শুধায় ছাগল শুধায় হায়,
সকলেরই মা আছে রে আমার কেন নাই।’
আমার মা’র খুব প্রিয় ছবি ‘বাদশা’। আমায় ‘বাদশা’র গান গেয়ে মা শোনাত। সেজন্য আরও মনে আছে গানগুলো এখনও।
এ ছবির ইউএসপি ছিল তিনটি পশু। সে সময়ে অ্যালসেসিয়ান কুকুর ল্যাসিকে বাংলা ছবিতে প্রায়ই ব্যবহার করা হত সঙ্গে একটি বাঁদর ও রামছাগল। তাদের নিয়েই খেলা দেখাত বাদশা।
পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেছে তবু এ ছবির জনপ্রিয়তা গানের জনপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি। এরকম তিনটে পশুকে নিয়ে শ্যুট করানো খেলা দেখানো বাংলা ছবিতে অভিনব ছিল। সেই মাস্টার শঙ্কর বললেন ‘এখন তো ছোটবেলার কথা গুলোই বেশি মনে পড়ে।’
এরপর অনুপ কুমারের সঙ্গে ‘বৌদি’, উত্তম কুমারের সঙ্গে ‘স্ত্রী’, ‘নতুন তীর্থ’ ছবি করেন। বড় হয়ে শিক্ষাবিদ হবার পাশাপাশি অঞ্জন চৌধুরীর বহু ছবিতে ছোটো ছোটো রোল করেছেন ‘ছোটো বউ’, ‘গীত সঙ্গীত’, ‘মায়া মমতা’ অনেক ছবি।
খুব সুন্দর গানও করেন। গেয়ে শোনালেন সেদিন ‘বালিকা বধূ’ তে ব্যবহৃত দিজেন্দ্রগীতি
‘আজি এসেছি, আজি এসেছি, এসেছি বঁধু হে নিয়ে এই হাসি, রূপ, গান।’
আমার সঙ্গে আলাপ জমার পর যখন ছবি তুলছিলেন তখন বললেন ড. শঙ্কর বাদশা ঘোষ, ‘তোমাদের সেই সেলফি তুলবে নাকি? নাকি এমনি।’ যাই হোক সেলফি নিয়নি।
যে ‘বাদশা’ ছবি এতটাই জনপ্রিয় পঞ্চাশ বছর পর রি-রিলিজ করে। সাদা কালো ছবি হলেও এ ছবি বাদশা আর অনবদ্য গান যুগে যুগে শিশুদের মন ভরাবে। তখনকার দিনে কত ছোটোদের ছবি হত ‘লালু-ভুলু’, ‘হংসরাজ’, ‘মান অভিমান’, ‘বাবলা’, ‘দেড়শো খোকার গল্প’, ‘হীরে মাণিক’।
এইসব শিশু অভিনেতা অভিনেত্রীরা কতজন প্রচারের বাইরে থাকায় হারিয়ে যায়। কিন্তু এদের খুঁজে পেলে কি ভালো লাগে। অনেকে শঙ্কর ঘোষ সোহমদের মত ইন্ডাস্ট্রিতে থাকেনও।
সঙ্গে দিলাম সেই সুবর্ন বসন্ত পেরনো ‘বাদশা’ ছবির কিছু দৃশ্য যাতে মাস্টার শঙ্কর আর শিক্ষাবিদ, অভিনেতা ও গায়ক ড. শঙ্কর ঘোষকে মেলাতে পারেন। আরেকবার ছোটোবেলাকে ফিরে দেখুন সবাই।
