টাশকি || ছোটগল্প
কিছুক্ষণ আগে মেঘ উদাস বৃষ্টি হয়ে গেল। এখন ফর্সা আকাশ। বেলকনিতে দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিলাম।
আমি সোনিয়া একটা চারতলা ফ্লাটের দোতালায় থাকি। হাজবেন্ড আহমেদ সবুজ একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে সিইও হিসাবে আছেন। নতুন বিয়ে, নতুন সংসার। সবুজ অফিসে চলে গেলে একা একা খুব বোর ফিল করি। একটা ঠিকা কাজের বুয়া আছে সকালে এসে দু’ঘন্টা কাজ করে দিয়ে চলে যায় তারপর থেকে আমি একা, বড় একা।
টিভি দেখা, মোবাইলে নেট ব্রাউজিং, হুমায়ন আহমেদের বই পড়া আর দিনের মধ্যে সাতবার সবুজের সাথে মোবাইলে কথা বলা- এই হলো নিত্য রুটিন। তিনতলার ফ্লাটে একজন ভদ্রমহিলা উঠেছেন কিছুদিন হলো। দেখা হলেই বকবক শুরু করে দেয়। ভাবী আমার বাসায় আসেন না কেন? আসেন চুটিয়ে গল্প করা যাবে। আমার আসলে কারো বাসায় যেতে ইচ্ছে করে না।
সাড়ে তিনটার দিকে একটু ঘুমঘুম ভাব এসেছে আমার। হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো বিরক্তিকরভাবে। বিছানা ছেড়ে উঠলাম। দরজা খুলতেই দেখি তিনতলার সেই ভাবী।
– কেমন আছেন ভাবী? কতদিন যেতে বললাম আপনি তো গেলেনই না তিনতলায়! হয়তো গরীব বলে অবহেলা!
– আরে না, ছি! কী যে বলেন ভাবী! আসলে শরীর তেমন ভালো যাচ্ছে না। তাই বেরুতে ভালো লাগে না।
– কি হয়েছে, ভাবী কি প্রেগনেন্ট?
– না ভাবী, তা নয়।
– বিয়ে যখন হয়েছে তখন হতে কতক্ষণ’
বলেই খিল খিল করে হাসতে শুরু করলেন মহিলা। আমার কেন জানি ভালো লাগছিলো না। একটা টেস্ট করানো দরকার। হলে হতেও পারে। বিচিত্র কি!
– ভাবী আপনার ছেলে মেয়ে কয়টি? আমি বললাম।
– কয়টি কি বলেন ভাবী। আমার তো একটাই ছেলে। যা ভদ্র আর বুদ্ধিমান আমার ছেলেটা দেখলেই অবাক হয়ে যাবেন।
– কোথায় সে? স্কুলে গেছে?
– না না ও তো ঘুমিয়ে আছে। কি বলবো, ভাবী ছেলে আমার একটা রত্ন। কখনোই বাবা মার অবাধ্য হয় না।
– সিড়িতে প্রতিদিন প্রচুর সিগরেটের টুকরা পড়ে থাকতে দেখি। ভাবী আপনার ছেলে কি সিগারেট খায়?
– না না কি যে বলেন ভাবী। আমার ছেলেটা অসম্ভব ভদ্র আর কিউট।
– কেন বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারে না?’
– না না ভাবী আমার ছেলে তো আমার রূপকথার রাজকুমার, যা বলি তাই শুনে। এ রকম বাধ্য ছেলে আর দুটি পাওয়া যায় না।
– খুব ভালো তো। কপালের নামই গোপাল। তা ভাবী ও কোন স্কুলে, কোন ক্লাসে পড়ে?
– ক্লাস, স্কুল কি বলছেন ভাবী? ওর বয়স তো এই শুক্রবারে ৬ মাসে পড়লো!
– অ্যা! বলেন কি ভাবী!
আমি তো পুরাই টাশকি খাইলাম!